আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে লেগ স্পিনাররা যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা রিশাদ হোসেন দলে আসার পর থেকে নিয়মিতই দেখছে বাংলাদেশ দল। এই বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচের মত আরও এই ডানহাতি স্পিনার এক ওভারেই বদলে দিলেন পুরো ম্যাচের চিত্র। বাংলাদেশের দেওয়া চ্যালেঞ্জিং রান তাড়ায় একটা সময়ে শক্ত অবস্থানে থাকার পর রিশাদের এক স্পেলে পথ হারাল ডাচরা। ব্যাট হাতে সাকিব আল হাসানের ছন্দ ফিরে পাওয়ার দিনে বোলারদের সম্মিলিত অবদান বাংলাদেশ পেল মহাগুরুত্বপূর্ণ এক জয়, যা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে সুপার এইট।
সেন্ট ভিনসেন্টে ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ২৫ রানে হারিয়ে আসরে নিজেদের দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ১৬০ রানের টার্গেট দিয়ে প্রতিপক্ষকে ১৩৪ রানে আটকে দিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
তিন ম্যাচে দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়েই আগেই সুপার এইট নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলঙ্কা বাদ পড়ে গেছে এই ম্যাচ চলাকালীন সময়েই। গ্রুপে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের শেষ ম্যাচের ফলাফলের ভিত্তিতে এখন চূড়ান্ত হবে গ্রুপের রানার্সআপ দল। তবে বেশ ভালো নেট রান-রেট থাকায় নেপালের কাছে হেরে গেলেও বাংলাদেশের সামনে সুপার এইটে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।
বাংলাদেশের আগের দুটি ম্যাচ ছিল রান করার জন্য ভীষণ কঠিন নিউ ইয়র্কে। সেই তুলনায় এই ম্যাচের উইকেট ছিল বেশ ভালো এবং ব্যাটিং সহায়ক। টসে হেরে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য একেবারেই ভালো হয়নি। দ্বিতীয় ওভারে আরিয়ান দত্তকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অধিনায়ক শান্ত।
আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম অবশ্য শুরু থেকেই ছিলেন দারুণ ছন্দে। ভিভিয়ান কিংমার করা দ্বিতীয় ওভারের শুরুটাই করেন চার মেরে। এরপর একটি ছক্কা ও আরেকটি চার মারেন ওই ওভারে। আসে মোট ১৮ রান। তবে পরের ওভারে আবারও আঘাত হানেন আরিয়ান। এবার তার শিকার লিটন দাস। মাত্র এক রান করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
এরপরই সাকিবকে নিয়ে বাংলাদেশকে লড়াকু স্কোর এনে দেওয়ার ভিতটা গড়ে দেন তানজিদ। দুজনই খেলেন আগ্রাসী মেজাজে। তাতে শুরুর বিপদ সামলে দ্রুত বাড়তে থাকে রান। লোগান ভ্যান বিকের করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তিন বাউন্ডারিতে সাকিব তুলে নেন ১৯ রান। ছয় ওভার শেষে বাংলাদেশ করে ৫৪ রান।
এই দুজনের ৪৮ রানের জুটি ভাঙেন পল ভ্যান মিকেরেন। পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে শেষ হয় তানজিদের ২৬ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কার ৩৫ রানের ইনিংস। প্রথম দুই ম্যাচের দলীয় সর্বোচ্চ রান করা তাওহীদ হৃদয় এই ম্যাচে আলো ছড়াতে পারেননি। ১৫ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৯ রান।
এরপর অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ইনিংসে এগিয়ে নিয়ে যান সাকিব। দুজনই সুযোগ বুঝে আগ্রাসী শট খেলেন এবং দলকে রাখেন ১৫০ প্লাস স্কোরের পথে। আগের দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে খারাপ করা সাকিব ফর্মে ফেরেন মাত্র ৩৮ বলের ঝকঝকে ফিফটিতে।
মাহমুদউল্লাহ ২৫ রানে ফিরলেও সাকিব থাকেন শেষ পর্যন্ত। শেষ ওভারে মারেন টানা দুই বাইন্ডারি। মাঝে ভ্যান বিকের করা ১৯তম ওভারে তিনটি চার মারা জাকের আলি খেলেন ৭ বলে ১৪ রানের ক্যামিও। সাকিব অপরাজিত থাকেন ৪৬ বলে ৬৪ রান।
রান তাড়ায় নেদারল্যান্ডস পায় বেশ ভালো একটা সূচনা। বাংলাদেশের পেসারদের চাপে ফেলে চার ওভারে বিনা উইকেটে ২২ রান তুলে ফেলে দলটি। শেষ পর্যন্ত ২ চার ও এক ছক্কায় ১৮ রান করা মাইকেল লেভিটকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন তাসকিন।
ঠিক পরের ওভারে শুরুতে ম্যাক্স ও’ডাউডের হাতে চার হজম করলেও শেষ পর্যন্ত তাকে ফিরিয়ে দেন তানজিম হাসান সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করে ৩ উইকেট নেওয়া এই পেসার এদিনও ওপেনিং স্পেলটা করেন প্রাণবন্ত।
৩৭ রানের তৃতীয় উইকেটের জুটিতে বাংলাদেশের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট ও বিক্রমজিৎ সিং। আক্রমণে এসেই ব্রেকথ্রু এনে দেন মাহমুদউল্লাহ। শিকার বানান এর আগে দুই স্পিনার সাকিব ও রিশাদকে তিন ছক্কা মারা বিপজ্জনক বিক্রমজিৎকে। ১৬ বলে ২৬ রান করে হন স্টামড।
এরপর আরও একটি জুটিতে বাংলাদেশের জয়ের পথে বাঁধা হওয়ার আভাস ছিল এঙ্গেলব্রেখট ও স্কট এডওয়ার্ডসের। দুজনই যখনই সেট, তখনই রিশাদের ওই ওভার। চাপের মুখেও সাহস দেখিয়ে একটু ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন বলটা, লফটেড শট খেলতে গিয়ে টাইমিং মিস করে ক্যাচ আউট হন মাত্র ২২ বলে ৩৩ রান করা এঙ্গেলব্রেখট।
বাংলাদেশকে আনন্দে ভাসিয়ে এক বল বাদেই আবার রিশাদের আঘাত। দারুণ এক ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে টার্নে পরাস্ত করেন এগিয়ে আসা বাস ডি লিডেকে। দারুণ এক স্ট্যাম্পিং করেন লিটন, বেশ স্মার্ট ছিলেন তিনি পুরো ম্যাচ জুড়েই।
এরপরই আস্তে আস্তে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় নেদারল্যান্ডস। শেষ ভরসা হয়ে থাকা এডওয়ার্ডস বড় শট মারার প্রচেষ্টায় মুস্তাফিজুরের প্রথম শিকারে পরিণত হন। তার আগে করেন ২৫ রান।
এরপর বাকিটা ছিল কেবলই নেদারল্যান্ডসের পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর লড়াই। শেষ পর্যন্ত তারা থামে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩০ রান পার করে। ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার রিশাদ। ৩০ রানে দুই উইকেট নেন তাসকিন।